নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রের মূল্যবান উপহার সামগ্রী ও তৈজসপত্র সংরক্ষণ করা হয় ‘তোষাখানা’য়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশের তোষাখানাটি এতদিন ছিল বঙ্গভবনের রান্নাঘরের দোতলায়। এর আগে ছিল বঙ্গভবনের মানুক হাউজে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশে ১৯৭৪ সাল থেকে শুরু হওয়া রাষ্ট্রীয় তোষাখানাটি অবশেষে ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার শাসনামলে স্থায়ী ঠিকানায় ফিরেছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর বিজয় সরণির বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর সংলগ্ন এলাকায় নির্মিত তোষাখানা জাদুঘরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৫০ হাজার বর্গ ফুট এলাকায় পাঁচতলা অত্যাধুনিক এ রাষ্ট্রীয় তোষাখানা জাদুঘরটি নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এটি নির্মাণ করা হয়। এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, তোষাখানা নামের অর্থ এমন একটি ভাণ্ডার, যেখানে রাষ্ট্রের মহামূল্যবান উপহার সামগ্রী ও তৈজসপত্র রাখা হয়। এর মধ্যে দেশি-বিদেশি তৈজসপত্র, স্মারক চাবি, মুদ্রা, কোনও দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্মরণিকা, মুকুট, ক্রেস্ট, কোনও মহান ব্যক্তির প্রতিকৃতি অথবা আলোকচিত্র, শিল্পকর্ম, লোকশিল্প বা হস্তশিল্পের নমুনা প্রভৃতি।
সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে রাষ্ট্রপ্রধানকে উপহার দেওয়ার রেওয়াজ চালু হয়। ফলে তোষাখানার সংগ্রহ বৃদ্ধি পেতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ টেলিভিশন, পুলিশ একাডেমি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে নানা স্মারক ও ক্রেস্ট উপহার দেয়। দেশের খ্যাতিমান শিল্পীরাও তাদের শিল্পকর্ম রাষ্ট্রপতিকে উপহার দিয়ে থাকেন। বিদেশি দূত ও খ্যাতিমান ব্যক্তিরা রাষ্ট্রপতিকে নানা ধরনের উপহার দেন। এসব উপহার সামগ্রীতে বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন দেখা যায়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীতে দেওয়া বিদেশি ক্রেস্ট, সম্মাননা বা উপহার ছাড়া আর কী আছে এই তোষাখানায়— জানতে চাইলে বঙ্গভবনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, তোষাখানায় থাকা সামগ্রীর মধ্যে চাঁদে পাঠানো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, চাঁদের মাটি, তরবারির স্বর্ণখচিত খাপ, প্রতীকী অশোকস্তম্ভ ও মালাবিয়া মিনার, গাজির পট এবং মুক্তিযোদ্ধাদের স্মারক উল্লেখ্যযোগ্য।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে তোষাখানা সংরক্ষণের জন্য ‘তোষাখানা সংরক্ষণ ও প্রশাসন আইন ১৯৭৪’ প্রণয়ন করা হয়। পরে এটি সংশোধন করে ‘তোষাখানা সংরক্ষণ ও প্রশাসন আইন ১৯৯০’ জারি করা হয় এবং ২০১২ সালে আইনটি পুনরায় সংশোধন করা হয়।
সূত্র জানায়, বঙ্গভবনে তোষাখানায় সংরক্ষিত সংগ্রহের সংখ্যা একহাজারের বেশি। তোষাখানা থেকে আড়াইশ গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য দেওয়া হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশে-বিদেশে পাওয়া এসব উপহার রাষ্ট্রের সম্পত্তি এবং এগুলো দেশের সম্মান ও মর্যাদা বহন করে। সুতরাং এগুলো খুব ভালোভাবে সংরক্ষণ করা উচিত। বিএনপি-জামায়াত আমলে বিভিন্ন উপহার ও দুর্লভ ছবি নষ্ট হওয়ার কথা উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজয় সরণির নতুন ও স্থায়ী এ তোষাখানা জাদুঘরে রাষ্ট্রীয় দুর্লভ সব উপহার ও স্মারক সংগ্রহ সাধারণ মানুষ দেখার সুযোগ পাবে।
জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম জানান, দর্শনার্থীদের জন্য তোষাখানাটি খুলে দেওয়ার বিষয়টি কিছুটা সময়সাপেক্ষ। কারণ বঙ্গভবন থেকে সব কিছু এনে এখানে সাজিয়ে রাখতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, উপহার সামগ্রী বঙ্গভবন থেকে তোষাখানা যাদুঘরে স্থানান্তর করতে হয়তো কিছুদিন সময় লাগবে। এরপর জনসাধারণ দেখার সুযোগ পাবে।